মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
সাপ্তাহিক সাহসী সময়ের ২৬তম বর্ষে পদার্পনে সকলকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন ৫৩তম মহান বিজয় দিবস আজ নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে খেজুরের কাঁচা রস পান না করার জন্য আহবান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মসূচি রাজবাড়ীতে হারানো ৩৫টি মোবাইল উদ্ধার করে মালিকদের কাছে হস্তান্তর করল পুলিশ রাজবাড়ীতে গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি কালুখালী উপজেলার হোগলাডাঙ্গী মাদ্রাসা থেকে দাখিল-আলিম পরীক্ষার কেন্দ্র স্থানান্তরে ১১টি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চয়তার পথে গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলায় ভ্যান উল্টে গভীর গর্তে পড়ে মসলা বিক্রেতা নিহত রাজবাড়ীতে সাহিত্যে বঙ্গবন্ধু শীর্ষক বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন ডিজিটাল যোগাযোগ ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের উদীয়মান ক্ষেত্র ঃ ভার্মা
স্কুলের মাঠে বিজয় মেলার নামে বাণিজ্য মেলা!

স্কুলের মাঠে বিজয় মেলার নামে বাণিজ্য মেলা!

ফাইল ছবি

চাঁদপুরে দুটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ দখল করে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিজয় মেলা। হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও হাসান আলী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠটি দুই মাস মেলার দখলে থাকা নিয়ে সমালোচনা চলছে। একইসঙ্গে অভিযোগ রয়েছে, বিজয় মেলার নামে বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হয় এখানে।

মেলার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের অভিযোগ— বিজয় মেলাকে বাণিজ্য মেলায় পরিণত করতে জুতা, ব্লেজার, দা-ছেনি-কুড়াল, চশমা, খাবার, ব্যাগসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। এছাড়া দেখা যায় পুতুলনাচও। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন স্টলের সংখ্যাই থাকে বেশি।

প্রায় এক দশক ধরে শহরবাসী বিজয় মেলার সময় পরিবর্তন ও তা অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য দাবি তুললেও কাজ হয়নি। তবে এবার তা জোরালো হয়েছে। মেলার স্টিয়ারিং কমিটি, উদযাপন পরিষদ, বিভিন্ন উপ-পরিষদের অনেক সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাও স্থান পরিবর্তনের ব্যাপারে জোরালো দাবি জানিয়ে আসছেন।
চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুব ওয়ালী বলেন, ‘এখানে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করে। তাছাড়া হাসান আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও খেলার মাঠ এটি। তবে এখানে বিজয় মেলার অনুমতি দেন জেলা প্রশাসক তথা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ প্রশাসন। আমাদের কাছে অনুমতির অনুলিপি আসে। কিন্তু এবার এখনও আসেনি।’

হাসান আলী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরদার আবুল বাশার বলেন, ‘মাঠটি হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের। কিন্তু আমার বিদ্যালয়ে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১ হাজার ৯৬৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ওরাও এটি ব্যবহার করে। ওদের অ্যাসেম্বলি হয়। কিন্তু মেলার কারণে এগুলো করা যায় না।’

বিভিন্ন সংকটের কথা ভেবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর পৌরমেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ এই স্থানে মেলা করার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তার ভাষ্য, ‘এই মাঠে মেলা করার ব্যাপারে আমি বরাবরই বিপক্ষে। তাই আয়োজকদের নিষেধ করার পাশাপাশি জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে মেলার জন্য অনুমতি না দিতে বলেছি।’

এদিকে জোরালো দাবির মুখে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও চাঁদপুর পৌর কর্তৃপক্ষ। তাই গত ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ওই স্কুল মাঠে মাসব্যাপী মেলা করার অনুমতি দেয়নি তারা। তবে প্রশাসনিক অনুমতি না মিললেও রবিবার (১৯ নভেম্বর) থেকে হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিজয় মেলার স্টল তৈরি ও মাঠ প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়ে গেছে।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে, মেলাটি মাসব্যাপী (১-৩০ ডিসেম্বর) না করে চাঁদপুর মুক্ত দিবস ৮ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত চালানোর অনুমতি দেওয়া হতে পারে। অথবা আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে। এছাড়া কিছু শর্তও দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া প্রেক্ষাপট বিবেচনা ও জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করে, ভবিষ্যতে এই মেলা এখানে হওয়া উচিত না— এমন একটি রিপোর্ট জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মণ্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মেলা সম্পর্কে পুলিশ সুপার একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। সেটি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

১৯৯২ সালে চাঁদপুরে শুরু হয় বিজয় মেলা। চাঁদপুর মুক্ত দিবস থেকে শুরু হওয়া এই আয়োজন চলতো বিজয় দিবস তথা ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এর মেয়াদ কয়েকদিন বৃদ্ধি করা হলেও ২০০০ সালের পর বাড়তে থাকে দিনের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বেড়েছে স্টলের সংখ্যা। কিন্তু কমতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ স্টলের পরিধি।

মেলা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম আকবর বলেন, ‘বিজয় মেলার নামে এখানে আসলে বাণিজ্য মেলাই চলে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। এভাবে মেলার নামে মুক্তিযুদ্ধের অনুভূতিকে ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধাদের বিতর্কিত করা হচ্ছে।’

গত ২৫ বছর ধরে মেলার মাঠ ও মঞ্চের দায়িত্বে থাকা এবং এবারের মেলার মহাসচিব হারুন আল রশীদ বলেন, ‘মেলার অনুমতি কখনোই আনিনি। ১৯৯২ সাল থেকেই ডিসি অফিসের প্রোগ্রামের রেজোল্যুশনে অন্তর্ভুক্ত হয়ে আসছে এ আয়োজন। গত দুই বছর নিয়মটি শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসক আসার পর থেকেই বলেছেন, মেলার অনুমতি নিতে হবে। তাই এবার একমাস আগে ডিসি ও এসপি অফিসে আবেদন করা হয়েছে।’

চাঁদপুর বিজয় মেলার মহাসচিবের অভিযোগ, ‘চট্টগ্রামে বিজয় মেলার জুয়ার আসর থেকে একরাতে যে উপার্জন হয় তার কিছুই আমাদের এখানে হয় না। বাংলাদেশের অনেক বিজয় মেলায় অশ্লীলতা ঢুকে গেছে। আমাদের পুতুলনাচে কোনও মেয়ে নাচে না। আমাদের মঞ্চে কোনও অশ্লীল নাচ নেই। সে তুলনায় আমাদের মেলা অনেক আদর্শিক স্থানে রয়েছে।’

বাণিজ্যিকীকরণ প্রসঙ্গে এই আয়োজক বললেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন বিজয় মেলায় যে ধরনের দোকানপাট থাকে সেই তুলনায় আমাদের মেলায় মার্জিত দোকানই স্থান দেওয়া হয়। ১০ বছর আগে দোকানের সংখ্যা ছিল ১৯২। আর এ বছর বাণিজ্যিক স্টলের সংখ্যা ১৩২টি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রদর্শনী স্টল ১টি। বাংলাদেশের কোনও বিজয় মেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ স্টল নেই। এবার স্টলটি আরও সুন্দর করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে আমাদের যে স্টল আছে, তা সাজানোর মতোই ম্যাটার নেই। যেগুলো ছিল তার অনেক কিছুই ১৯৯৮ সালের বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে।’

মেলার মহাসচিব হারুন আল রশীদের ভাষ্য, ‘গত চার বছর আমরা রেজোল্যুশন করে নিয়েছি, এখানে কোনও জুতার দোকান থাকবে না। আমরা কামারিদের বলে দিয়েছি, দা-ছেনি এসব ডিসপ্লে করতে পারবেন না।’

এবারের বিজয় মেলা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে এই আয়োজকের দাবি— ‘একটি পদকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি। আমাদের সংস্কৃতি কর্মীদের সঙ্গে একটু দূরত্ব রয়েছে। আশা করি, সহসাই তা মিটে যাবে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved  2022 sahasisamoy
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!